সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করে চলেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাভিত্তিক সংগঠন “ফেয়ার ফেইস” একটি উজ্জ্বল নাম। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, দুর্যোগে সাহায্যের হাত বাড়ানো, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা গড়ে তোলা—ফেয়ার ফেইস নিরলসভাবে এসব কাজ করে যাচ্ছে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর’ একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২০১৯ সালে সংগঠনটির নামকরণ ও লগো তৈরী করেন সংগঠনের সমন্বয়ক এম. শামীম আহমেদ। ৯ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সমন্বয়ে জগন্নাথপুরের মানুষের আর্থ-মানবিক কল্যাণ ও জীবন মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এম. শামীম আহমেদ, আবু খালেদ জিবলু, সাইদুল ইসলাম বাবলু, আব্দুল আলীম, সাইফুর রহমান মিনহাজ, রিংকু চন্দ, শহিদুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন ও জুয়েল হোসেন-দের কর্মপরিকল্পনায় ২০২০-২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ধারাবাহিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপজেলাবাসীর জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে সুনামধন্য এই সংগঠনটি। সামাজিক, মানবিক ও জীবন মানের উন্নয়ন, শিক্ষা, পরিবেশ ও প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ ও পথশিশুদের নিয়ে বিশেষভাবে কাজকরা দেশসেরা পরিবেশপ্রেমী এওয়ার্ড প্রাপ্ত এই সংগঠনটি উপজেলাবাসী সহ দেশের সমাজকর্মীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম।
ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর উপজেলার দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের মাঝে নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে থাকে। বিশেষত শীত মৌসুমে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, ঈদে নতুন জামাকাপড় দেওয়া, এবং রোজায় ইফতার বিতরণ কর্মসূচি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।
আমরা স্থানীয় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষাবিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং বিনামূল্যে পাঠদান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ফেয়ার ফেইস-এর সহায়তায় এখন স্কুল ও কলেজে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুরে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, রক্তদান কর্মসূচি এবং বিভিন্ন সময় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কোভিড-১৯ এর মতো রোগ সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আমরা বিনামূল্যে ওষুধও বিতরণ করে থাকি।
পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফেয়ার ফেইস বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, প্লাস্টিকবিরোধী প্রচারণা এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে থাকে। স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা পরিবেশ বান্ধব মানসিকতা গড়ে তোলায় কাজ করে যাচ্ছি।
নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশুর অধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ফেয়ার ফেইস নিয়মিত ওয়ার্কশপ ও সেমিনার আয়োজন করে থাকে। এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও নারী নির্যাতন বিরোধী প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে থাকি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় ফেয়ার ফেইস-এর স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে থাকে, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা করে এবং জরুরি সেবা দিয়ে থাকি।
ফেয়ার ফেইস স্থানীয় জনগণের মধ্যে নানাবিধ সামাজিক সমস্যা যেমন—মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালিয়ে আসছে।
আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও কখনও কখনও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করে থাকি।
ফেয়ার ফেইস কেবল সেবা নয়, বরং সমাজে মানবিকতা, সহানুভূতি, দয়া ও দায়িত্ববোধের বীজ বপন করছে ফেয়ার ফেইস। বিভিন্ন বয়সের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে আমরা মানবিক নেতৃত্ব তৈরি করেছি।
আমাদের এই সংগঠনের মাধ্যমে অনেক তরুণ সমাজসেবার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা সমাজে নেতৃত্ব, সংগঠনের দক্ষতা ও জনসেবায় সম্পৃক্ত থেকে নিজেদের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।
জগন্নাথপুরের মাটি ও মানুষের জন্য ফেয়ার ফেইস একটি আশার নাম। আমরা যেভাবে নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। শুধু সাহায্য নয়, আমরা সমাজকে সচেতন ও মানবিক করে তুলতে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করছি। সকলের উচিত এমন সংগঠনগুলোর পাশে দাঁড়ানো, তাদের উৎসাহ দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন সেবামূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা।